Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Monday, May 16, 2016

‘ক্লোজড লিগে’র অনুমতি ফিফা দেবে বলে মনে হয় না | সুব্রত দত্ত - বর্তমান

মঙ্গলবার দিল্লির ফুটবল হাউসে এক ঐতিহাসিক সভায় মিলিত হতে চলেছেন এ দেশের ফুটবল কর্তারা। মূল অ্যাজেন্ডা, দুই লিগ অর্থাৎ আইএসএল এবং আই লিগের সংযুক্তিকরণ। গত দু’বছর আইএসএল কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। মূলত আটটি শহর ভিত্তিক এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের স্থায়িত্ব মাত্র আড়াই মাস। এটি চালায় আইএমজি রিলায়েন্স স্টার। অন্যদিকে আই লিগ হল এ দেশের জাতীয় লিগ। এটি ফিফা এবং এএফসি’র অনুমোদিত লিগ। ন’টি ক্লাব আই লিগে এ বছর খেলেছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলেছে এবারের আই লিগ। 

এএফসি অনেকদিন আগে থেকেই এআইএফএফ’কে দুই লিগের সংযুক্তিকরণ নিয়ে চাপ দিচ্ছিল। আড়াই মাস ব্যাপী আইএসএল চালিয়ে আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান হয়েছে। এখন তারাও চাইছে দুই লিগ মিলে যাক। কারণ, মাত্র আড়াই মাস ধরে চলা আইএসএল কখনোই দলমালিকদের কাছে লাভজনক হতে পারে না। কিন্তু ফেডারেশনের ফুটবল ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আই লিগের মেয়াদ আড়াই মাসের বেশি করা সম্ভব নয়। জাঁকজমকপূর্ণ আইএসএলের পাশে মেনস্ট্রিম ভারতীয় ফুটবল অর্থাৎ আই লিগ অনেকটাই ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। নতুন কর্পোরেট ক্লাবগুলি আই লিগ খেলে তেমন প্রচার পায় না বলে ফেডারেশনের কাছে অতীতে অভিযোগ জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, আই লিগকে জনপ্রিয় করে তোলা যায়নি বলেই ফ্যান বেস তৈরি হয়নি। এই কারণে মাহিন্দ্রা, জেসিটি, পিরামল গ্রুপের পুনে এফসি আই লিগ থেকে নাম তুলে নিয়েছিল। সুতরাং, দুই লিগের সংযুক্তিকরণ অবশ্যম্ভাবী। আইএসএলের মার্কেটিং স্কিল এবং পেশাদারিত্ব থেকে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। দুই লিগ মিলে গেলে আমার ধারণা, শহরভিত্তিক ফ্যান বেস তৈরি হতে বাধ্য। 
এবার আসা যাক, সংযুক্তিকরণের প্রসঙ্গে। এই কমিটিতে রয়েছেন ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্তা এবং আই লিগের সিইও। কোনও ভাইস-প্রেসিডেন্টকেই রাখা হয়নি এই কমিটিতে। নেই কোষাধ্যক্ষ সহ অন্য কোনও পদাধিকারী ও কার্যকরী কমিটির সাধারণ সদস্য। বলা হচ্ছে, নতুন লিগে খেলতে হলে বিডিং প্রসেসের মাধ্যমে আসতে হবে। গত তিন বছরের আই লিগের পারফরম্যান্সের বিচারে মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল ও বেঙ্গালুরু এফসি নতুন লিগে খেলার যোগ্যতার মাপকাঠি স্পর্শ করতে পেরেছে। কিন্তু মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলের আর্থিক ক্ষমতা সীমিত, এটা আমরা জানি। কমপক্ষে ৩৫কোটি টাকা ফি বছর লগ্নি করতে হবে নতুন লিগে খেলার জন্য। শোনা যাচ্ছে, আই লিগের বাকি ক্লাবগুলি খেলবে লিগ ওয়ানে। এছাড়া মহমেডান স্পোর্টিং সহ দ্বিতীয় ডিভিসনের ক্লাবগুলি খেলবে আই লিগ টু’তে। তবে মিটিংয়ের আগে কোনওকিছুই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। আমার প্রশ্ন হল, মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গল কি আগামী মরশুমে নতুন লিগে খেলার জন্য ৩৫কোটি টাকা তুলতে পারবে? যদি না পারে তাহলে তাদেরও খেলতে হবে লিগ ওয়ানে। এই দু’টি লিগ অর্থাৎ ওয়ান এবং টু’তে অবনমন এবং প্রমোশন থাকবে। কিন্তু বলা হচ্ছে, নতুন লিগে নাকি অবনমন থাকবে না। তিনটি লিগের খেলাই চলবে একইসঙ্গে। আরেকটি প্রস্তাব হল, ইস্ট বেঙ্গল অথবা মোহন বাগানকে আগামী দিনে আতলেতিকো ডি কলকাতার সঙ্গে সংযুক্তিকরণ ঘটিয়ে নতুন লিগে খেলানো। সেক্ষেত্রে কলকাতা থেকে খেলবে দু’টি দল। নতুন লিগ হবে মোট দশটি দল নিয়ে। যদি এটি বাস্তবায়িত হয় তাহলে নতুন দলের নাম বদল করে আতলেতিকো মোহন বাগান বা আতলেতিকো ইস্ট বেঙ্গল হতে পারে।
এবার আসা যাক আই লিগের ক্লাবগুলির আর্থিক ক্ষমতা প্রসঙ্গে। আই লিগের কোনও ক্লাবেরই বাজেট ১৫কোটির বেশি নয়। অথচ আইএসএলে খেলতে গেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলিকে ফি বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গল কী ভাবে আগামী দিনে বাড়তি ২৫কোটি টাকা তুলবে? নতুন লিগ পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে চললে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলি বাজেট বাড়াতে পারে। আরেকটি সমস্যা হল, কলকাতা থেকে তিনটি দল খেললে আতলেতিকো ডি কলকাতা নতুন করে কোনও ফ্যান-বেস তৈরি করতে পারবে না। কারণ, বাঙালি ফুটবল নিয়ে বরাবরই ঘটি-বাঙালে বিভক্ত। নতুন লিগে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি লাগবে ১৫কোটি টাকা। মোহন বাগান বা ইস্ট বেঙ্গল কি এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে নতুন লিগে খেলতে সমর্থ? নতুন লিগে যেহেতু অবনমন নেই তাই এটি হবে ক্লোজড লিগ। ফিফা কখনোই এই ধরনের লিগকে জাতীয় লিগের তকমা দিতে রাজি হবে না। কারণ, যারা লিগ ওয়ান বা টু’তে চ্যাম্পিয়ন হবে তাদের জন্য বন্ধ থাকবে নতুন লিগের দরজা। সেক্ষেত্রে তাদের খেলার নেপথ্যে কোনও বাড়তি মোটিভেশন থাকবে না। সুতরাং, দুই লিগ মিলে গেলে ভারতের বহু ক্লাব উঠে যাবে। তারা ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। স্পোর্টিং ক্লাব দ্য গোয়া, ডেম্পো, সালগাওকর, লাজং এফসি, ডিএসকে শিবাজিয়ান্সের যুব উন্নয়ন পরিকাঠামো যথেষ্ট ভালো। এদের ২০১৭-১৮ মরশুম থেকে লিগ ওয়ানে খেলতে হবে। কারণ, তারাও ১৫কোটি টাকা বাড়তি অর্থ দিতে পারবে না। দ্বিতীয় ডিভিসন লিগে যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে তারা আগামী মরশুমে শেষ আই লিগে খেলবে। এক্ষেত্রে ডেম্পো ইতিমধ্যেই এই যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু ডেম্পোর জন্যেও নতুন লিগের দরজা বন্ধ। অথচ, গোয়ার এই ক্লাবটি পাঁচবার জাতীয় লিগ জিতেছে। 
আইএসএলে’র প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে খেলে ছ’জন করে বিদেশি ফুটবলার। কারণ, বিদেশি ফুটবলাররাই প্রধান আকর্ষণ ও ক্রাউড পুলার হয়ে থাকেন। নতুন লিগের লাইসেন্সিং ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী চারজনের বেশি বিদেশি প্রথম একাদশে রাখা যাবে না। এছাড়া পাঁচ মাস ধরে চলবে নতুন লিগ। সেক্ষেত্রে বিদেশিরা অন্য দেশের লিগে খেলার সুযোগ পাবেন না। লিগ ওয়ানে যোগদানকারী ক্লাবগুলির আর্থিক সামর্থ্য এখনও সেইভাবে খতিয়ে দেখেনি ফেডারেশন। মূলত টিকিট বিক্রি এবং স্থানীয় স্পনসরশিপ থেকেই তাদের মূল রোজগার হয়ে থাকে। সুতরাং, মাঝারি সারির ক্লাবগুলি ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে পারে। লিগ ওয়ানের ক্লাবগুলিকে বাজেট কাটছাঁট করতে হবে। মাইলেজ কম পাওয়ায় স্পনসরও বেশি টাকা ঢালতে রাজি হবে না। সুতরাং, ভারতের অধিকাংশ মেনস্ট্রিম ক্লাবগুলি আর্থিক সমস্যায় পড়বে। 
সবশেষে আমার পাঁচটি পরামর্শ সাজিয়ে দিলাম:
১) নতুন ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ২০১৭-১৮ মরশুমে আই লিগের ক্লাবগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। 
২) ফ্র্যাঞ্চাইজি রেজিস্ট্রেশন ফি আই লিগের ক্লাবগুলির ক্ষেত্রে তুলে দেওয়া হোক। কারণ, ১৫ কোটি টাকা দেওয়ার ক্ষমতা এই ক্লাবগুলির নেই। 
৩) প্রমোশন এবং রেলিগেশন নতুন লিগে অবশ্যই থাকা দরকার। না হলে লিগ ওয়ানে খেলা ক্লাবগুলির কোনও মোটিভেশন থাকবে না। 
৪) টিভি সম্প্রচার স্বত্ব থেকে পাওয়া লভ্যাংশ বন্টন করা হোক লিগ ওয়ান এবং লিগ টু ক্লাবগুলির মধ্যে। 
৫) নতুন লিগের প্যাকেজিং অনেক ঝাঁ চকচকে করা আবশ্যক। মার্কেটিং এবং ব্রডকাস্টিংয়ের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা দরকার।

(লেখক অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং আইএফএ’র প্রেসিডেন্ট)

No comments:

Post a Comment