Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Saturday, May 14, 2016

সাত বছর পর মোহন বাগানের সামনে ফেড কাপ জয়ের হাতছানি | বর্তমান

১৯বার ফাইনালে সবুজ-মেরুন


মোহন বাগান- ০ : লাজং এফ সি-০
(দু’দফার গড়ে ৫-০ গোলে জয়ী মোহন বাগান)
ছয় বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনা঩লে উঠল মোহন বাগান। ময়দানে ক্লাব তাঁবুর লনে এখনও ‘ভারতসেরা মোহন বাগান’ বলে বিশাল ব্যানার লাগানো আছে। ক্লাবের সক্রিয় সদস্যরা আই লিগে রানার্স হওয়ার পরও যা খুলে ফেলতে পারেননি। তাঁদের আশা, ফেড কাপে চ্যাম্পিয়ন হলে ওই ব্যানার খোলার প্রয়োজন হবে না।
মোহন বাগানের তামাম সমর্থকদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে কিনা তা জানা যাবে শনিবার, ২১ মে রাতে। শনিবার শিলংয়ে মোহন বাগান অবশ্য পেন- ফাবিও পেনার লাজং এফ সি’কে হারাতে পারেননি। বরং লাজং প্রাপ্ত সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে পারলে মোহন বাগান হেরেও যেতে পারত। কিন্তু দেবজিৎ মজুমদার দুটি দূরপাল্লার শট না বাঁচালে এবং রাজু গায়কোয়াড় দুই বার নিখুঁত ফাইনাল ট্যাকল না করলে মোহন বাগান-দুর্গের পতন অবধারিত ছিল। তবে এই তথ্যের পাশাপাশি এটাও সত্যি যে মোহন বাগান পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে ফেড কাপ ফাইনালে খেলতে নামবে। গোটা ম্যাচে নিজেদের বাঁচাতে মোহন বাগান ফুটবলাররা ছিলেন বেশ সতর্ক। জেজে এবং সনিকে কড়া ট্যাকল করেও পার পেয়ে যান লাজং ফুটবলাররা। জেজেকে ফাউলের সময়ে হাত পিছনে রেখে কাটসুমি- সনিরা রেফারিকে লাজংয়ের রাফ ফুটবল সম্বন্ধে অভিযোগ জানালেও মোহন বাগানীরা কখনও মেজাজ হারাননি। পেন শুক্রবার প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বললেও তার প্রতিশোধ নিতে নাই঩জেরিয়ানটির বিরুদ্ধে অযাচিতভাবে কোনও ঘটনায় জড়িয়ে পড়েননি মোহন বাগানীরা। একটি হলুদ কার্ড দেখায় এদিন কিংশুক দেবনাথ আর প্রণয় হালদারকে প্রথম একাদশে রাখেননি সঞ্জয় সেন। দুই জনের অভাবই বোঝা গিয়েছে। মোহন বাগান রক্ষণে প্রীতম কোটাল আর ধনচন্দ্র সিংকে বেশ ক্লান্ত মনে হয়েছে। বিপিন সিং আর আইজ্যাকের গতির সামনে মোহন বাগানের দুই সাইড ব্যাককে অসহায় মনে হয়েছে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে সনি এবং কাটসুমিকে অনেকটা নীচে নেমে আসতে দেখা যায়। সনি নর্ডির দৌড় এদিন দেখা যায়নি। ফাইনালের আগে তরতাজা থাকতে খুব একটা গা ঘামাননি তিনি। কাটসুমিকে তো দেখা গেল বক্সে নেমে লুসিয়ানো আর রাজুর মধ্যে সৃষ্টি হওয়া ফাঁক ভরাট করতে। মাঝমাঠ থেকে তেমন বল পাননি জেজে। তবুও ৭২ মিনিটে বিক্রমজিতের কাছ থেকে বল পেয়ে লাজংয়ের গোলরক্ষক বিশালকে সামনে পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিশাল অ্যাঙ্গল ছোট করে দেওয়া গোল পাননি জেজে।
চলতি মরশুমে ঘরের মাঠে শিলং খুব বেশি ম্যাচ হারেনি। নিজেদের মাঠে ‘প্রবলতর প্রতিপক্ষ’ রেকর্ড এদিনও অটুট রাখল থংবই সিংটোর দল। রবিন গুরুং এদিন খেলায় ডিপ ডিফেন্সে চিংলেনসানা সিংয়ের মনোবল বেড়ে যায়। কর্নেল গ্লেনকে তাই মাঠে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের নোটবুকে গ্লেনের নাম এদিন ওঠেইনি। ফেড কাপে গোলের বন্যায় ভাসছিল মোহন বাগান। তিনটি ম্যাচে করেছিল ১২টি গোল। দ্বিতীয় পর্বের সেমি-ফাইনাল ড্র হওয়ায় একদিক থেকে ভালোই হল। ফাইনালে ল অফ অ্যাভারেজ অন্তত মোহন বাগানের বিরুদ্ধে যাবে না- এটা ভেবে সবুজ মেরুন সমর্থকরা আনন্দিত হতে পারে। বিপিন সিংকে রুখতে এদিন বেশ সমস্যায় পড়েন ধনচন্দ্র। ডানদিক থেকে বিপিন তিনবার বিপজ্জনকভাবে বল বাড়ান। রাজু গাইকোয়াড় জায়গায় ছিলেন না। ফাবিও পেনা বলে পা ছোঁয়াতে পারেনি। প্রথমার্ধে লাজং চারটি কর্নার পেলেও মোহন বাগান একটিও পায়নি। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে মোহন বাগান কতটা নির্বিষ ছিল শনিবার। ৬০ মিনিটে বিপিন সিংয়ের কর্নারে চিংলেনসানার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। 
২০১০ সালের পর মোহন বাগান আবার ফেড কাপের ফাইনালে গেল। সেবার কটকে মোহন বাগান ভাসুমের গোলে হেরে যায় ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে। গত তিন বার কোয়ার্টার ফাইনাল গ্রুপ লিগ থেকেই ছিটকে যায় মোহন বাগান। ২০০৮ সালের পর মোহন বাগান এই পয়া টুর্নামেন্টে জেতেনি। ২০০৯ সালে নেহরু স্টেডিয়ামে সেমি-ফাইনালে ইস্ট বেঙ্গলের কাছে হেরে ফেড কাপে মোহন বাগানের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা শুরু হয়। এবার সেই গুয়াহাটিতেই নতুন হওয়া ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে কি চাকা ঘুরবে সবুজ-মেরুনের? আগামী সপ্তাহে বাঙালি আন্দোলিত হবে ফেড কাপ ফাইনাল ঘিরে। ১৩ বছর পর মোহন বাগানকে আই লিগ দিয়েছেন কোচ সঞ্জয় সেন। এবার সাত বছর পর ফেড কাপ দেওয়ার হাতছানি সঞ্জয় সেনের কাছে। শনিবার ১২৭ বছরের ক্লাবটিকে ফেড কাপে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে তিনি জনতার হৃদয়ে স্থান করে নেবেন। তবে শনিবার জিততে না পারলে মোহন বাগান গত ছয় বছরে পাঁচটি মরশুম ট্রফিহীন থাকবে। মেরিনার্সের কাছে তাই ২১ মে, রাজীব গান্ধীর জন্মদিন সত্যিই সুপার স্যাটার ডে।

মোহন বাগানের সেরা দশটি বছর
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত ১২৭ বছরে মোহন বাগান ক্লাবের ইতিহাসে সেরা দশটি বছরের স্পেল চিহ্নিত করতে বললে নিশ্চিতভাবে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিবেচিত হবে। এই পর্বে সুব্রত ভট্টাচার্যের সুযোগ্য নেতৃত্বে মোহন বাগান একের পর এক ট্রফি জিতেছিল। তার আগে বা পরে এমন সাফল্যের নজির আর নেই। একঝলকে এই পর্বে মোহন বাগানের ট্রফি জয়ের নজির একবার খতিয়ে দেখা যাক। 
১৯৭৭ - (ত্রিমুকুটসহ চারটি ট্রফি) আই এফ এ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ, বরদলুই ট্রফি।
১৯৭৮- (চারটি ট্রফি) শিল্ড, ফেডারেশন কাপ, কলকাতা লিগ, শেঠ নাগজি ট্রফি।
১৯৭৯ - (তিনটি ট্রফি) শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, কলকাতা লিগ।
১৯৮০ - (দুটি ট্রফি) ফেড কাপ, ডুরান্ড কাপ।
১৯৮১ - (চারটি ট্রফি) শিল্ড, ফেড কাপ, রোভার্স কাপ, শেঠ নাগজি ট্রফি।
১৯৮২ - (তিনটি ট্রফি) শিল্ড, ফেড কাপ, ডুরান্ড কাপ। 
১৯৮৩ - (একটি ট্রফি) কলকাতা লিগ।
১৯৮৪ - (চারটি ট্রফি) ডুরান্ড কাপ, কলকাতা লিগ, বরদলুই ট্রফি, সিকিম গোল্ড কাপ। 
১৯৮৫ (তিনটি ট্রফি) ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ, সিকিম গোল্ড কাপ।
১৯৮৬ (চারটি ট্রফি) ডুরান্ড কাপ, ফেড কাপ, কলকাতা লিগ, সিকিম গোল্ড কাপ।
*এই দশ বছরে মোহন বাগান পাঁচবার আই এফ এ শিল্ড, পাঁচবার ফেডারেশন কাপ, পাঁচটি ডুরান্ড কাপ, তিনবার রোভার্স কাপ, পাঁচবার কলকাতা লিগ, তিনবার সিকিম গোল্ড কাপ ও দু’বার করে বরদলুই ট্রফি ও শেঠ নাগজি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

No comments:

Post a Comment